জয়দেবের কেঁন্দুল মেলায় চলুনঃ
বীরভূমের জয়দেব মেলা বা কেঁদুলির মেলা বৈষ্ণব বাউলদের এক মহাতীর্থ। প্রতি বছর মকর সংক্রান্তির দিন মেলা বসে। অজয় নদীর তীরবর্তী কেঁন্দুল গ্রামে।
কথিত আছে স্বয়ং জয়দেব এই মেলার সূচনা করেন। ইতিহাস বলে, প্রতি বছর মকর সংক্রান্তির দিন গঙ্গা স্নানের জন্য কাটোয়া যেতেন। কবির সাধনায় ও একাগ্রতায় তুষ্ট হয়ে গঙ্গাদেবী স্বপ্নে দর্শন দিয়ে জানালেন যে ভক্তের কষ্ট লাঘবের জন্য তিনি প্রচ্ছন্নভাবে মিশে থাকবেন অজয়ের শ্রোতে।
আর পৌষ মাসের মকর সংক্রান্তির দিন তিনি পরিপূর্ণভাবে নিজের উপস্থিতি প্রমান স্বরূপ
তাঁর শঙ্খ-বলয়যূক্ত বাহু দু-খানি দেখাবেন গ্রামের পাশে কদমখন্ডির ঘাটে।
স্বপ্নাদেশে উদ্বেলিত জয়দেব অজয়ের জলে তাঁর প্রথম পূণ্যস্নান উপলক্ষে এক মেলার আয়োজন করেন। তাতে আমন্ত্রিত হলো দেশ-বিদেশের অগণিত ভক্ত। এই বিষয়ে তাঁর একটি কবিতায় তিনি উল্লেখ করেছেন।
" পৌষ সংক্রান্তির এক দিবস থাকিতে।
মহোৎসব ঘটা প্রভূ কৈলা ভালোমতে।।
দেশ-বিদেশের লোক মহা গোল হৈল।
সংকীর্ত্তন কলরবে পৃথিবী পুরিল।
সাধুসন্ত তেজবন্ত একত্র হইল।
অজয় কিনারে সব আঁখড়া বাঁধিল।।
জগন্নাথ ক্ষেত্রে যেন প্রসাদ বিকায়।
জাতি পাতি না বিচারে পাইলেই খায়।।
সেই মতে দেখি জয়দেবের ভঙ্গিতে।
চারি বর্ণ একাকার কদমখন্ডিতে।।"
জয়দেবের প্রবর্তিত চতুবর্ণের মিলন মেলাই আজ কেঁন্দুলের মিলন মেলা বা বাউল মেলা। আজ সেই মিলন মেলা সারদেশের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। আগে এই মেলা ছিল একদিনের এখন শেষ হতে এক সপ্তাহ লাগে। তারপরও বেশ কিছুদিন চলে।
তবে আসল রূপ দেখতে হলে মকর সংক্রান্তির দিন যেতে হবে।
নয়টি চূড়া বিশিষ্ট রাধাবিনোদ মন্দিরকে কেন্দ্র করে বাউল মেলার আয়োজন। টেরাকোটা খচিত মন্দিরটিতে পূজো পাচ্ছেন জয়দেব পদ্মাহতীর আরাধ্য দেবতা রাধাবিনোদ। বর্ধমানের মহারানী মন্দিরটি স্থাপন করিয়ে দিয়েছিলেন। মকর সংক্রান্তির দিনে এত ভীড় হয় যে মন্দিরে প্রবেশ করা কঠিন। অজয়ের চর পর্যন্ত বিশাল এলাকা জুড়ে দোকান পাট। তবে মেলার মূল আকর্ষণ হচ্ছে বাউল সমাবেশ। অজয়ের চর জুড়ে বসে বিশাল বাউল গানের আসর ও আখড়া। সারারাত ধরে চলে আখড়ায় আখড়ায় বাউল গান। মাটির মানুষের মেঠো সুরের ঝরণায় ভেসে যায় মেলার মাঠ। জয়দেবের জন্মভূমি তাদের কাছে তীর্থক্ষেত্র।
পৌষ সংক্রান্তির প্রচন্ড ঠান্ডা উপেক্ষা করে হাজার হাজার মানুষ বাউল আখড়াগুলি ঘুরে ঘুরে উপভোগ করেন বাউল গান। এছাড়াও কোথাও কীর্ত্তন, কোথাও রাধামাধবের মূর্তি স্থাপন করে অষ্ট প্রহর নাম সংকীর্ত্তন। আবার কোথাও পালাগান। আর আছে। আর আছে বিনা আমন্ত্রণে পংক্তি ভোজনের অবাধ অধিকার।
সূদুর অতীতের জয়দেব - গঙ্গাদেবীর কিংবদন্তী বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের অন্তরে বিশ্বাসের এক অনির্বান দীপ শিখা জ্বালীয়ে রেখেছে আজও।
কি ভাবে মেলায় পৌঁছাবেন ?- হাওড়া থেকে গণদেবতা বা শান্তিনিকেতন এক্সপ্রেসে জয়দেবের মেলায় যাওয়া যায়।
কোথায় থাকবেন ? বোলপুর অথবা বক্রেশ্বরে থাকা যায়। এখান থেকে গাড়ি করে কেন্দুল জয়দেবের মেলায় যেতে পারেন।
0 মন্তব্যসমূহ