অপরূপা কিন্নর কৈলাশ
প্রকৃতি তার অমলিন ও অকৃত্রিম দানে হিমালয়কে ভরিয়ে রেখেছে। ট্রেনে কলকা আসতে হবে। কালকা স্টেশান থেকে টয় ট্রেনে শিমলা। এ পথ অতীব সুন্দর যেন ছবি আঁকা পট। হিমাচল প্রদেশের রাজধানী শিমলা শহর। স্বপ্নিল চির সবুজের উপত্যকা। এই পথের দূরত্ব ৯৬ কিলোমিটার। ১০২ টি ট্যানেল। ১৭০ টি সেতু, ৯১০ টি রোমাঞ্চকর বাঁক।৭ হাজার ফুট উচ্চতায় শিমলা শহর। মনোমুগ্ধকর শান্ত পরিবেশ এই শহর।
এখান থেকে ঘুরে আসতে হবে ম্যাল থেকে।
এখানে দেখে নিতে হবে ১. জাখু পাহাড় ২. ক্রাইষ্ট চার্চ, ৩. ভ্যাইসরিগেল লজ, ৪. দি রিজ ৫. বাসনা দেবী মন্দির, ষ্টে মিউজিয়াম, স্কালপয়েন্ট। এখান থেকে ১২ কিমি দূরে অভয়ারণ্য।
এবার নলদোহার দিকে যেতে হবে। এখানে সবুজের সমারোহ। সবুজের উপত্যকা। সারি বদ্ধ ওক, রডনডেনড্রন, সেডারের হাতছানি। পাহাড় এখানে আকাশের সীমানায় যেন ছবি আঁকছে। পাহাড়ের ঢালে সফেদ বরফ গোটা এলাকা ঢেকে আছে। পুরু বরফের চাদর ফুড়ে আকাশ ছুঁতে চাইছে দিঘল পাইন, ওক আর দেবদারুর ঘণ গহিন বন। একটু দূরে শতদ্রু বহে চলেছে নিরিবিলি। নুড়ি, বালি শরীরে তির তির করে বয়ে চলেছে। শতদ্রুর দু' কূল বেয়ে নেমে আসছে সবুজের অমল প্রেম।
নলদোহরে এক অপূর্ব সৌনন্দর্য্যে ভরপুর।
এবার চলে আসতে হবে নারকুন্ডায়। আনুমানিক ২৭০৭ মিটার উচ্চতায় আরেক পিকচার পোষ্টকার্ড। নির্জন আঁকাবাকা নির্জন মায়াবি পথ। পাহড়ের উপর হাতুমাতার মন্দির। শিমলা থেকে নারকুন্ডার দূরত্ব ৭০ কিলোমিটার। এখানে বরফে মাতামাতি করা যাবে। চলতে চশতে পৌঁছে যাওয়া যাবে বুসাহার রজাদের রাজধানী রামপুরে। শতদ্রু নদীর তিরে সাজান গোছান সুন্দর শহর।
রায়পুরের আকর্ষণীয় জায়গা সড়কের পাশে পদমপ্যালেস। বুসাহার রাজাদের গড়া এই প্যালেস
সত্যিই আকর্ষণীয়। নান্দনিক সৌন্দর্য্যের তুলনা করা দূরহ ব্যাপার। দেওয়ালে ম্যুরালা চিত্র, মোঘলীয় স্থাপত্যের ছাপ। সরা দরবার হল জুড়ে অসাধারণ শিল্পকলার নমুনা। উনিশ শতকের বৌদ্ধ বিহার দেখবার মত। নদীর কিনারে সত্যনালয়ণের মন্দির। নিত্য পুজো হয় এখানে।
এখানকার শাল জগত বিখ্যাৎ।
এবার ৪০ কিলোমিটার দৃরে সাহারাণপুর। কিন্নরের গেটওয়ে বলা হয়। চোখ জুড়ান মায়াবি প্রকৃতির মেলবন্ধন। একদিকে বরফাবৃত পর্বতশিখর-- শ্রীখন্ড ও কাত্তিক স্বামী অন্যদিকে সবুজের শুধু সমারোহ। দেখে মনে হয় প্রকৃতি অকৃপণ ভাবে এখানে ঢেলে দিয়েছে।
১৮০০০ ফুট উচুতে বরফে ঢাকা শ্রীখন্ড মহাদেব ও গুসিপিসু পর্বতমালার মোড়কে সাহারাণপুরের ভীমকালী মন্দির । পুরাণের কাহিনী অনুযায়ী রাক্ষস নিধনের জন্য দেবী ভীমরূপ ধারন করেন। তাই এই দেবীর নামে ভীমাকালী। কালির শান্ত রূপ ওপার্বতি রূপে পুজিত হয়। সন্ধ্যকালে পাহড়ি বাসিন্দাদের আঞ্চলিক নাচ গানের আসর বসে। খুব উপভোগ্য অনুষ্ঠান।
পরের দিন দেখে নেওয়া যাবে মিউজিয়াম, আধুনিক প্রযুক্তিতে গড়ে ওঠা স্টেডিয়াম, পক্ষী বিহার কেন্দ্র। মোনাল আর ট্যাপোপান পাখির প্রজনন কেন্দ্র বলা উচিত।
এরপর দেখে নেওয়া যাবে আপেল, ন্যাজপাতি, খুবনার আর অ্যাপ্রিকটের ক্ষেত । নবরাত্রি ও দশেরার উৎসব খুব জমিয়ে হয়।
হিমাচল প্রদেশের সাংলা হচ্ছে অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র।
শেষমেষ হাজির হতে হবে পাংসাতে। পাংসার উত্তরে কৈলাশ আর দক্ষিণে গাড়োয়াল পর্বতমলার সূউচ্চ পর্বতরাজী। যেন পাহারা দিচ্ছে এই শৈল শহরকে। সাংলার আপেল বাগান ফলে ফলে লাল হয়ে আছে। বাড়ি ঘর সব কাঠের দারুন শিল্প নন্দনে সমাদৃত। প্রত্যেক বাড়ির ছাদে সাদা নিশান উড়ছে। এখানে একটি ড্যাম তৈলী আছে। জলাধারের গায়ে চাষ হচ্ছে রাজমাগাম, ভুট্টা, আলু প্রভৃতি। সাংলার দর্শনীয় স্থান হচ্ছে কামরু ফোর্ট অন্যতম।
সাংলা থেকে ১৭ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত চোখে পড়বে পাহাড়ি ঝর্ণা।
কিভাবে যাবেন ঃ-- হাওড়া থেকে কালকা। কালকা থেকে ট্রেনে বাসে শিমলা। এখান থেকে টাটা সূমো অথবা বোলার বা স্করপ্রিয়তে কুরফি, ফাগু, নহলদহ,নারকুন্ড, সাহারান, সাংলা, রামপুর ও ছিটুকুল হয়ে কিন্নর কৈলাশ।
0 মন্তব্যসমূহ