Header Ads Widget

Responsive Advertisement

বাঁকুড়ার অমরকানন ঐতিহাসিক ও রোমাঞ্চকর - চলুন ঘুরে আসি

 বাঁকুড়ার অমরকানন ঘুরতে চলুনঃ



অমরকানন জায়গাটির নামের মত এখানকার নিকট অতীতের ইতাহাসের কৌতহল উদ্দিপক। প্রায় কয়েকশো বছর আগে এ অঞ্চলের জনহীন উঁচুনিচু ভাঙ্গাজমির মাঝে  একদল মানুষ রাজপুতনা থেকে এসে জঙ্গল পরিস্কার করে গ্রামের পত্তন করেন এবং চাষবাসে মন দেন। তখন এ অঞ্চলের নাম ছিলো মাছরাঙা জঙ্গল। এঁরা সিংহ পদবীধারী ও ক্ষত্রিয় বংশীয়। ক্রমে ক্রমে এরা শুধু বাঙালীর সাথে মিশে যাননি - বাঁকুড়া জেলার পক্ষে স্বাধিনতা আন্দোলনে এরাই অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। বিশ শতকের প্রথম পাদে জমিদার হন দিবাকর সিংহের পুত্র গোবিন্দ প্রসাদ সিংহ। তিনি ছিলেন কর্মবীর ও স্বাধিনতা সংগ্রামী। পরবর্তিকালে মা সারদা দেবী কাছে দীক্ষা নিয় হয়ে ওঠেন মানুষ গড়ার কারিগর। এখানে রানিগঞ্জ ও পুরী যাওয়ার সংযোগস্থলে অহল‍্যাবাঈ 
রোডের উপর গাছ-গাছালীতে ভরা রামকৃষ্ণ সেবদল আশ্রম গড়ে তোলেন। তাঁরই আহ্বানে ১৯২৫ সালে মহত্মা গান্ধী রামকৃষ্ণ আশ্রমের দ্বারোধঘাটন করেন। পরে অবশ‍্য নরেন্দ্রপুর লোকশিক্ষা পরিষদের অনুমোদন লাভ করেন। সঙ্গে ছিলেন বিদ্রোহী কবি নজরুল ও স্বাধিনতা সংগ্রামী সতীশ চন্দ্র দাশগুপ্ত। কবি নজরুল ইসলাম শাল-পিয়াল আর মহুয়ার সৌন্দর্য‍্যে মূগ্ধ হয়ে একটি তাৎক্ষণিক প্রতিভায় একটি গান রচনা করেন ---
গানটির শুরু এমন
"অমরকানন মোদের অমরকানন 
বন কে বা বলে ভাই,
বনকে বলেরে ভাই আমাদের এ তপোবন
আমাদের এই তপোবন।
(এর) দক্ষিণে শালী নদী কুলকুল বয় 
কূলে তার শাল তরু ফুল ফুলময়।"
নজরুল যে গাছের তলায় বসে গান লিখেছিলেন সেই গাছটিও আজ বিদ‍্যমান। আর অমরকাননে এসে কবি যে ঘরটিতে থাকতেন সেই ঘরটিও বিদ‍্যমান। তাঁরই আকর্ষণে ১৯৩১ সালে যতীন্দ্রমোহন সেনগুপ্ত ১৯৪০ সালে নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু ১৯৪১ সালে শ‍্যামা প্রসাদ মুখোপাধ‍্যায় সহ অনেক বিদগ্ধজন এখানে পদার্পন করেন।ঋষিবন্ধু গোবিন্দ প্রসাদ সিংহ তাঁর তরুণ বন্ধু ও স্বাধীনতা সংগ্রামী অকাল প্রয়াত অমরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের স্মরণে এ স্থানের নাম করণ করেন অমরকানন।
কাছেই রয়েছে একচালা কাঞ্চনপুরের জঙ্গল বা মাছরাঙা জঙ্গল। খুব নয়ানভিরাম। অথচ এখানে হিংস্র জন্তু - জানোয়ারের উপদ্রব নেই। নেই কোন চোর ডাকাতের কাহিনী নেই। এখানে ঘুরত ঘুরতে নেই মানা। 
অমরকানন থেকে দুই কিলোমিটার দূরে অবস্থিত বাদা গ্রাম। লালমাটির দেশে সবুজ বনানী ঘেরা সুন্দর প্রাকৃতির মাঝে কেমন আদিম কালের সৃষ্ট হওয়া আদিম কালের " কোড়া পাহাড় "  যা একালের টুরিষ্ট স্পট। 
প্রক‍‍ৃতপ্রেমী ও ভ্রমণ পিপাসুরা বেশী পরশ্রম না করেই পাহাড়ের গায়ে চলতি হাঁটা পথে সহজেই উঠতে পারেন। চড়াই পথ। যার ট্রেকিং তাদের কাছে এটি আদর্শ জায়গা। পাহাড়ের পাদদেশে রয়েছে সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন তপবনে আশ্রম। নানা ফুলের  শোভায় বর্ণময়। মাঝে আজে এক গভীর ইঁদারা। পাশে খানিক নীচে রয়েছে এক গভীর জলাশয়। শান্ত স্নিগ্ধ পরিবেশ। পাহাড়ের নীচে দিয়ে বয়ে চলেছে শির্ণকায় স্রোতস্বনী নদী, মিশেছে শালী নদীতে। 
পাহাড়ী তপবনে কিছূ সমঋ বিশ্রাম করে চূড়ায় ওঠার জন‍্য প্রস্তুতি নিতে হবে। কোড়া পাহাড়ের শিখরে গড়ে উঠেছে অষ্টভুজা পার্বতি মন্দির। মন্দিরের পিছনে নাতিদীর্ঘ অচিন গাছ ছায়া বিস্তার করে দাঁড়িয়ে আছে। তার নীচে রয়েছে লিঙ্গরুপী শিব তার বাহনরূপী নন্দী। পাহাড়টির চূড়া অদৃশ‍্য প্রাচীর ঘেরা ও তার গায়ে মহাপুরুষের বাণী ও গীতার শ্লোক উদ্ধৃতি করে লেখা। এখানে বসলে অসীম মন অসীমের সঙ্গে যেন বাঁধা পড়ে যায়। দূরে দেখা যাবে শুশুনিয়া পাহাড়। চারিদিকে পাহাড়ের অনন‍্য প্রকৃতি ও সৌন্দর্য‍্য মন ভরে যায়। 
অমরকাননের আর একটি দর্শনীয় স্থান  হচ্ছে গ‍্যংদুয়া ড‍্যাম বা শালী ড‍্যাম। দূরত্ব চার কিলোমিটার। গ‍্যংদুয়া থেকে শালী নদীর উতপত্তি হয়েছে। নাতিদীর্ঘ জলাধারের পাশে শীতকালের পিকনিকের স্পট। এখান থেকে সূর্যাস্ত খুবই নয়াণাভিরাম। 

কীভাবে পৌঁছাবেন ঃ  হাওড়া থেকে যে কোন ট্রেনে দূর্গাপুল। ১৭২ কিলোমিটার। বাঁকুড়া থেকেও আসা যায়। 
থাকবার জায়গা ঃ স্বামী সমতানন্দ, অভায়নন্দ ব্রহ্মচারি  -- অমরকানন। 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ